<p>অফিস রাজনীতি সম্পর্কে একটি বিষয় চিরন্তন সত্য- আপনি হয়তো একে ঘৃণা করতে পারেন আর নয়তো ভালোও বাসতে পারেন অথবা এর চর্চাও করতে পারেন। কিন্তু আপনি কখনোই এ থেকে রেহাই পাবেন না। চাটুকার পরগাছা কর্মী থেকে শুরু করে ধূর্ত সহকর্মী এবং পক্ষপাতদুষ্ট ম্যানেজার কর্মক্ষেত্রে এমন ধরনের লোকদের মোকাবিলা করতে হয় আমাদের প্রায় সকলকেই। প্রকৃতপক্ষে সব প্রতিষ্ঠানেই অফিস রাজনীতি আছে। আর এর মোকাবিলা করাও বেশ কঠিনই বটে। কখনো কখনো এর ফলে আপনি মানসিক অবসাদেও আক্রান্ত হতে পারেন।</p> <p>কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন এটি শুধু স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা কর্মীদের মধ্যে মতামতের ভিন্নতারই প্রতিফলন। সুতরাং এ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা না করে বরং বিষয়টি আপনাকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আর তা কীভাবে করবেন সে সম্পর্কে এখানে আপনার জন্য রইল কয়েকটি পরামর্শ…</p> <p><strong>১. পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন</strong><br /> আতঙ্কিত না হয়ে বা এর মধ্যে খাবি না খেয়ে বরং একটি দীর্ঘশ্বাস নিন এবং পরিস্থিতিটা নৈর্ব্যক্তিকভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার টিমের মধ্যে ঠিক কী ঘটছে এবং প্রতিটি সহকর্মী আসলে কী অর্জন করতে চাইছেন তা বুঝার চেষ্টা করুন। একবার যদি আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি বুঝতে পেরেছেন এই আধুনিক জঙ্গল এর জগাখিচুড়ি আসলে কী চায় তাহলে আপনি আপনার অবস্থানকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য কী করতে হবে তাও বুঝে যাবেন।</p> <p><strong>২. সঠিক পথে নেটওয়ার্কিং বা সম্পর্কের জাল তৈরি করুন</strong><br /> আপনার সকল সহকর্মীর সঙ্গেই বন্ধুভাবাপন্ন থাকার চেষ্টা করুন। এবং তাদের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তবে কাজের মাধ্যমেই নিজের শক্ত অবস্থানটি গড়ে তুলুন। এতে টিমে আপনি সম্মান অর্জন করবেন। কোনো বিশেষ গ্রুপের অংশ হয়ে দলবাজিতে যোগ দিবেন না। বরং একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখুন। আর প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী কর্মীদের সঙ্গে ভাল সমীকরণ বজায় রাখুন। এর নিশ্চয়ই কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার নেই, তাই নয় কি?</p> <p><strong>৩. নেটওয়ার্কিংয়ের উপকারীতা</strong><br /> সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার পর তা থেকে উপকারীতা আদায় করার চেষ্টা করুন। আপনার নেটওয়ার্কিং দক্ষতা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য এবং ঘটনাঘটন সম্পর্কে আপডেট থাকুন। কথাটি শুনে হয়তো বাজে লাগলেও নিজের ঢোল নিজে পেটানোই সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ। আর যখনই সুযোগ আসবে তখনই সিনিয়রদের কাছে নিজের অর্জনগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। নিজের দক্ষতাগুলোকে কোথায় প্রদর্শণ করতে পারবেন সে সুযোগ খুঁজুন এবং বসের সুনজরে থাকা এবং গুডবুকে নাম লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।</p> <p><strong>৪. সেয়ানা সহকর্মীদের থেকে সাবধান থাকুন</strong><br /> যেসব সহকর্মী অফিস রাজনীতি করেন তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বও বজায় রাখতে হবে। তাদের সামনে কোনো কথা বলতে সাবধান থাকুন। কেননা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না সেসব কথা তারা কীভাবে এবং কখন আপনারই বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। আর তাদের কর্মকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করুন এবং একটি পন্থা উদ্ভাবন করুন তাদেরকে সুকৌশলে হ্যান্ডেল করার জন্য। যদিও এটি বেশ কঠিন।</p> <p><strong>৫. কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করুন</strong><br /> আপনি যদি মনে করেন আপনার কোনো সহকর্মীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কোনো ইস্যু আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানর করা সম্ভব তাহলে তাই করুন। তাদেরকে জিজ্ঞেন করুন কী নিয়ে তারা সব মাথা ঘামাচ্ছিল এবং তারা কী অর্জনের চেষ্টা করছে। একটি অনুকূল পরিস্থিতি বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো আপনি আপনার টিমের কাজের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন।</p> <p><strong>৬. পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন</strong><br /> একটি পেশাদার পরিবেশে কীভাবে আচরণ করতে হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয়। আপনি কোনো গালগল্প করছেন না বা গুজব ছড়াচ্ছেন না অথবা কাউকে যথাযথ কোনো কারণ ছাড়া দোষারোপ করছেন না এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন। এমনকি আপনি যদি কারো বিষয়ে সতর্ক করতে চান তাহলে দৃঢ়তা বজায় রাখুন কিন্তু আগ্রাসী হয়ে উঠবেন না যেন। আপনার সততা আপনার হাতেই সুতরাং এমন পর্যায়ে নামবেন না যেখানে আপনার মর্যাদার হানি হতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সবসময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখার টেষ্টা করুন। ফলে অন্যরা আপনার দ্বারা প্রভাবিত হবে।</p> <p> </p>