<p>ভালো কর্মস্থল সেটি যেখানে কাজ করা আনন্দদায়ক এবং কর্মীদের সঙ্গে সম্মান প্রদর্শন করে আচরণ করা হয়। আর যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য বেতন দেওয়া হয়। এখন বেশির ভাগ কর্মীই তাদের কর্মস্থলে বেশি বেশি সততার সংস্কৃতির চর্চা হোক তাই চান; অসততা চান না। কর্মীরা এখন তাদের কম্পানিটি ঠিক কীভাবে চলে এবং তাদের বসরা কী ভাবেন তাও জানতে চান।</p> <p>কর্মীরা অনেক কর্কশ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিখেছেন যে, নিজের ক্যারিয়ার গড়ার দয়িত্ব এখন তাদেরকে পুরোপুরি নিজের হাতেই তুলে নিতে হবে।</p> <p>নিজের ক্যারিয়ারের ব্যবস্থাপনা নিজেকেই করতে হবে। এখন আর নিয়োগদাতাদের এ নিয়ে কিছু করার নেই। নিয়োগদাতারা যতক্ষণ তাদের প্রয়োজন হবে ততক্ষণই তাকে কর্মে নিযুক্ত রাখবেন। দীর্ঘকালব্যাপী চাকরিতে নিযুক্ত রাখার দিন এখন শেষ। অথচ নতুন সহস্রাব্দের প্রতিভার বাজারে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা আমাদের শব্দ ভাণ্ডার এবং মানসিকতা এখনও বদলাইনি।</p> <p>অথচ এখনই তা করার সময়। যেসব বিষয় নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে সেসব বিষয়ে মিথ্যা বলা বন্ধ করার এখনই সময়। আর সেসব বিষয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগও দেওয়া দরকার।</p> <p>আমরা সকলেই এখন নিজেরাই নিজেদের ক্যারিয়ার পরিচালনা করছি। আমরা সকলেই এখন উদ্যোক্তা। আর এ বিষয়ে আমাদের কোনো মিথ্যাও বলার দরকার নেই। কোনো কম্পানিই আপনাকে আজীবন কর্মে নিযুক্ত রাখতে পারবে না। আর তারা যদি সেটা করেও তাহলে আপনার জীবনটা নীরস হয়ে পড়বে।</p> <p>কেন আমরা প্রতিটি কর্মজীবী মানুষের নিজেকে বাজারজাতকরণের যোগ্যতাসম্পন্ন, নেটওয়ার্কে যুক্ত এবং ভালো ভালো প্রকল্প সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তীক্ষ্ণ থাকার বিষয়ে মুক্তভাবে কথা বলছি না?</p> <p>এগুলো একান্তই মানবিক চাহিদা। এখন আর আগের মতো এমনটা ভাবলে চলবে না যে, বিশেষ কোনো ব্যবস্থাপককে খুশি করতে পারলেই হবে। এবং বছর শেষে কর্মক্ষমতার একটি ভালো মূল্যায়ন পেলেই চলবে। বর্তমান কর্মস্থলে ভালো পারফরমেন্সের মূল্যায়ন পেলেই চলবে না। কারণ এই চাকরি চলে গেলে তা আর আপনার কোনো কাজে লাগবে না।</p> <p>আমাদেরকে এখন আমাদের সময় ও শক্তি দু্ই ভাগে বিভক্ত করে কাজ করতে হবে। অর্ধেক সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হবে বর্তমান চাকরির জন্য আর বাকি অর্ধেক সময় ব্যয় করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য।</p> <p>আমাদেরকে এ বিষয়েও মিথ্যা বলা বন্ধ করতে হবে যে, লোকে বাইরের প্রতিভার বাজারেও তাদের চোখ নিবদ্ধ রাখে; আর তা রাখাটা উচিতও বটে। পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের নিয়োগ চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং পুনরালোচনাও করতে পারি। আমরা সকলেই জানি যে, যেকোনো খাতের যে কোনো নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানই অার্থিক বা কর্মপ্রক্রিয়াগত পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন হলে কর্মী ছাটাই করতেও কসুর করবেন না।</p> <p>পরিবর্তিত বাজারের এই বুঝ শুধু নিয়োগদাতাদের জন্য কেন চাকরিপ্রার্থীদের জন্যও দরকার। এখনই সময় চাকরির খুপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে নিজেকে স্ব-নিযুক্ত কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার। এখন আপনার একটি পূর্ণকালীন চাকরি থাকার অর্থ হলো, আপনি শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো একজন ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করছেন। নিজের ক্যারিয়ার আপনার নিজেকেই গুছাতে হবে। আপনি আরো ভালো কোনো অবস্থানের সুযোগ পেলে তা গ্রহণ করা উচিত- নিজের অংশীদারদের পক্ষে।<br /> তৃতীয় যে মিথ্যাটি আমাদের বলা বন্ধ করতে হবে তা হলো, নিয়োগদাতারাই শক্তিশালী কিন্তু কর্মজীবীরা পিঁপড়ের মতো। এটাও সত্যি নয়। এটা যদি সত্যি হয় তার মানে দাঁড়াবে, নিয়োগদাতারা খুব নিচু অবস্থানে আছেন। নিয়োগদাতা ও কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক আস্থাবোধ ভয় থেকেও বেশি লাভজনক ও উপভোগ্য। অনেক প্রতিষ্ঠানই আস্থার বদলে বরং ভয়ের ওপর ভিত্তি করে চলে।</p> <p>তারা তাদের কর্মীদের এই বলে আতঙ্কে রাখেন, যে কোনো সময় তাদের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এই কথা শোনার পর কী করে কোনো কর্মীর মাঝে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য এবং প্রতিশ্রুতিশীলতার জন্ম নেবে? এর ফলে শুধু আস্থায় ঘাটতি সৃষ্টি হবে এবং প্রতিষ্ঠানের সেরা কর্মীটি ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রতিষ্ঠানে চলে যাবেন।</p> <p>এই বিষয়েও আমাদের এখন মিথ্যা বলা বন্ধ করা উচিত : বস হলেই কেউ বেশি স্মার্ট, প্রজ্ঞাবান বা বেশি পরিপক্ক হন না। একজন ব্যবস্থাপক অনেকটা কোনো বাদ্যযন্ত্রের কন্ডাক্টরের মতো। কন্ডাক্টর প্রশিক্ষনার্থীদের বলে দেন না কীভাবে বাদ্যযন্ত্রটি বাজাতে হবে। তিনি বরং সময় ঠিক রাখেন এবং ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দেন। আর বাদ্য বজিয়েদের পরস্পরের সঙ্গে এবং দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করিয়ে দেন।</p> <p>সবশেষে, যেসব বিষয় আমরা গ্রাহ্য করি সেসব বিষয়েও এখন মিথ্যা বল বন্ধ করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার সময় এখন আর নিজেদেরকে চুপ করিয়ে রাখা ঠিক হবে না। এখন সহজেই এ কথা বলা যায়, "আমার ব্যবস্থাপককে আরো বেশি আস্থাভাজন এবং আরো খোলা মনের হতে হবে।" তবে আমরা আমাদের ব্যবস্থাপককে ভীতিজনক হওয়ার কারণে দোষারোপ করতে পারি না। কারণ আমাদের সকলেই ভীতি অনুভব করি।</p> <p>আমরা এখন আমাদের সব ভীতিগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে কর্মস্থলে যা বলতে চাই তা বলতে পারি। বিষয়টি শুধু প্রথমবারই আপনার জন্য ভীতিজনক হতে পারে!<br /> সূত্র : ফোর্বস</p>