<p>এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব...গাইতে পারলে হয়তো গাইত চারপেয়ে ‘মেরা’। কুকুর প্রজাতি বা চারপেয়েদের মধ্যে মেরাই প্রথম যে শৃঙ্গ জয় করল। আর সে যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তা নেহাত কম নয় মোটেই। হিমালয়ের ২৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অবলীলায় সে উঠেছে একটি পর্বতারোহী দলের সঙ্গে।</p> <p>দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন মার্কিন নাগরিক ডন ওয়ারগোস্কি। তাঁরা প্রথমে মেরাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে তাঁদের সঙ্গে মেরার উপস্থিতি এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর পর তার উচ্ছ্বাস ওই দলকে অবাক করে দেয়। ওয়ারগোস্কিরা নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে লুকলা হয়ে তাঁদের অভিযান শুরু করেন। তার পরই নিতান্তই কাকতালীয়ভাবে মেরা তাঁদের সঙ্গে এসে জোটে।</p> <p>পূর্ব নেপালের বারউন্সে (২৩ হাজার ১২৯ ফুট) শৃঙ্গ আরোহণের লক্ষ্য নিয়ে এসেছিল এ পর্বতারোহী দলটি। এভারেস্টের আঙিনায় এ শৃঙ্গটি খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও যথেষ্ট কঠিন ও টেকনিক্যাল। ১৯৫৪-এ এখানে প্রথম গিয়েছিলেন এডমন্ড হিলারি। তাঁর দলের কলিন টড ও জিওফ হ্যারো প্রথম এই শৃঙ্গে আরোহণ করেন। ওয়ারগোস্কির দলের সঙ্গে বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-ওয়ান, ক্যাম্প-টু ফুট পেরিয়ে মেরা পৌঁছায় সেই বারউন্সে শৃঙ্গে। অভিযাত্রী দলটি কুকুরটির নাম দিয়েছিল মেরা। কারণ বারউন্সে শৃঙ্গ অভিযানের আগে দলটি মেরা (২১ হাজার ২৪৭ ফুট) নামে আরেকটি শৃঙ্গে আরোহণ করে। আরোহণের পর দলটি যখন বেসক্যাম্পে ফিরছিল, তখন থেকে মেরা দলটির সঙ্গ নেয়। তাই তার নাম হয়ে যায় মেরা।</p> <p>ওয়ারগোস্কি বলছেন, মেরাকে প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে তার উৎসাহ দেখে তাঁরা আনন্দই পান।  সবচেয়ে বড কথা, তাঁদের মনে হয়েছে মেরা বাকি কুকুরের চেয়ে আলাদা। আর সে এতটাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগোচ্ছিল সবার আগে, যেন মনে হচ্ছিল জায়গাটা তার আগে থেকেই চেনা। নেপালের পর্বতারোহণের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংরক্ষণকারী সংস্থা হিমালয়ান ডাটাবেসের বিলি বায়ার্লিং জানালেন, ‘আমার জানা নেই আজ পর্যন্ত কোনো কুকুর নেপালের কোনো শৃঙ্গ আরোহণ করেছে কি না।’ বায়ার্লিংয়ের তথ্যানুযায়ী, কিছু কুকুর এভারেস্ট বেসক্যাম্প (১৭ হাজার ৬০০ ফুট) এবং কিছু কুকুর খুব বেশি হলে খুম্বু আইসফল পেরিয়ে ক্যাম্প-টু পর্যন্ত গেছে—এটাই সম্ভবত কুকুরদের একটি স্বীকৃত শৃঙ্গ আরোহণের বিশ্বরেকর্ড।</p> <p>অবাক হয়েছেন আলপাইন অ্যাসেন্ট ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র গাইড ও বিখ্যাত পর্বতারোহী লাক্পা রিতা শেরপাও। তিনি বলেন, ‘বারউন্সে মাউন্ট রেনারের চেয়ে কঠিন পিক। আমি জানি না কিভাবে কুকুরটি বেশ কিছু কঠিন অঞ্চল পার হলো, বিশেষ করে মাশরুম গিরিশিরা। দুই রাত ক্যাম্প-টুতে খোলা আকাশের নিচে সে কিভাবে বাঁচল। ওই উচ্চতায় মানুষ অল্টিটিউড সিকনেস, চূড়ান্ত অবসন্নতা, মাথা ব্যথা, বমি এবং পালমোনারি ও সেরিব্রাল ইডিমারের শিকার হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেঁচে ফেরে না।’ সূত্র : দ্য ওয়াল।</p>