<p>পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মতোই এবার যেকোনো মামলার তদন্ত করতে চাচ্ছে আনসার বাহিনী। তদন্তের পাশাপাশি তারা জঙ্গি, নাশকতাকারীসহ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি যেকোনো অপরাধীকে তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা চাচ্ছে। মূলত সব কটি সংস্থা একত্র হয়ে আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনী নামে পরিচালিত হওয়ার কথা বলছে তারা।</p> <p>সম্প্রতি আনসার সদর দপ্তর থেa স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।</p> <p>ওই প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনপ্রশাসনকে সহায়তা করবেন আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে আনসারের একাধিক পদ পরিবর্তন করা হবে। পুলিশের মতোই প্রতিটি রেঞ্জে আনসার ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর থাকবে। জনগণকে নিরাপত্তা দিতে আনসারের একাধিক ব্যাটালিয়ন তৈরি করা হবে। প্রতিটি আনসার সদস্যের কাছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে।</p> <p>এদিকে আনসারের প্রস্তাব নিয়ে পুলিশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর সরকারের হাইকমান্ডের কাছে নালিশ করেছে।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে। যেকোনো অভিযানের সময় আনসার সদস্যরা পুলিশের সঙ্গেই থাকেন। পুলিশ ও র‌্যাব যে ধরনের কাজ করে হঠাৎ তারা কেন তা করতে চাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। আনসারের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় পাস করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হবে।</p> <p>তবে আনসারের কয়েকজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, দেশের স্বার্থেই আনসার কাজ করবে। আনসার জনগণকে নিরাপত্তা দিলে পুলিশের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।</p> <p>এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আনসার ও সীমান্ত) জ্যোতির্ময় দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আনসারের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর পুলিশসহ সব কটি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাষ্ট্র ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সবাই নিরলসভাবে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে বিরোধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে আনসার সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাতে আনসারকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।</p> <p>সূত্র জানায়, আনসারের দেওয়া প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, এ বাহিনী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২ এ প্রদত্ত শৃঙ্খলা বাহিনী হবে। আইন ও বিধি হওয়া সাপেক্ষে আদেশ ও নির্দেশ অনুযায়ী আনসার বাহিনী মহাপরিচালকের পরিচালনাধীন থাকবে। আইনের বিধান অনুযায়ী জননিরাপত্তা, অপরাধ প্রতিরোধ, শান্তিরক্ষা এবং সরকারের নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে একটি নিয়মিত বাহিনী গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। নির্ধারিত সংখ্যক ও শ্রেণির কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হবে এ বাহিনী। আনসার ব্যাটালিয়নের এক বা একাধিক ব্যাটালিয়ন থাকবে এবং গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।</p> <p>প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ঢাকায় বাহিনীর সদর দপ্তর থাকবে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নের জন্য একটি সদর থাকবে। বিভাগীয় সদর দপ্তরে রেঞ্জ সদর দপ্তর বা প্রয়োজনে অন্য কোনো জেলায় বা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেঞ্জ সদর দপ্তর থাকবে।</p> <p>আনসার ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব হবে—অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা; অপরাধ এবং অপরাধসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ; অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ও অন্যান্য বেআইনি বস্তু উদ্ধার, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী অপরাধের তদন্ত; জঙ্গি, নাশকতাসহ জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ অপরাধীদের তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার জন্য জনপ্রশাসনকে সহায়তা, যুদ্ধকালীন বাহিনীর আদেশ কাঠামোর নিয়ন্ত্রণে থেকে অভিযানিক কর্মকাণ্ড, দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন, সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন। এ ছাড়া উপধারা (ক) অনুসারে সংশ্লিষ্ট আনসার ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার মামলার তদন্ত করবে; অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতে অথবা অন্য যেকোনো আইনে বলা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। মামলার তদন্ত করার পর তার প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে দাখিল করা হবে এবং ওই প্রতিবেদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপযুক্ত আদালত বা ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন ওসি।</p> <p>প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা যে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন একই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন আনসারের তদন্তকারী কর্মকর্তারাও। আনসার সদস্যরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। আনসার ব্যাটলিয়নের একাধিক পদ থাকবে। এর মধ্যে থাকবে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক, ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক, কম্পানি অধিনায়ক, ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার, কম্পানি উপ-অধিনায়ক, প্লাটুন কমান্ডার, সহকারী প্লাটুন কমান্ডার  ও হাবিলদার পদ।</p> <p>প্রস্তাবের ব্যাপারে আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এসএমএস পাঠানোর পরও তিনি কোনো সাড়া দেননি।</p> <p>পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আনসারের প্রস্তাব পাস করা হলে পুলিশের সঙ্গে বিরোধ বাধবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশ ১৮৮৬ সালের আইনে চলছে। পুলিশ যা করে তা যদি আনসার করে তাহলে পুলিশের থাকার দরকার কী।’</p> <p>পুলিশের ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি মহল আনসারকে উসকে দিচ্ছে। আনসারের ওই সব প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরকারের হাইকমান্ডের কাছে নালিশ করা হয়েছে। দেখি, সরকার কী করে। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’</p> <p>এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের কাছে স্বীকৃত বাংলাদেশ পুলিশ। বিশ্ববাসী পুলিশের কাজের প্রশংসা করে আসছে। আর এখন অনেক সংস্থা পুলিশ হতে চাচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করাসহ যেসব কাজ করে তা এখন আনসারও করতে চাচ্ছে। তারা প্যারালাল পুলিশ হতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আনসার দিয়ে যদি যেকোনো মামলার তদন্ত করতে হয় তাহলে আর কী বলার আছে। তাহলে বিচার ও শাসনব্যবস্থা তো থাকবে না। আনসারের প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ যা করে আনসার যদি তা-ই করে, তাহলে আমাদের কাজটা কী হবে?’</p> <p>আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক আরো বলেন, ‘থানাগুলোয় আনসার সদস্যরা কাজ করেন। যখন প্রয়োজন হয় তখন আনসার সদস্যদের সহায়তা নেওয়া হয়। কিন্তু এমন কী হলো যে আনসার এসব প্রস্তাব করে বসল।’ তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।</p> <p> </p>