<p>আত্মগোপনে থেকেই এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ আলমাছ। ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ রুবেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি, বহু  হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র কারবারি বলে অভিযুক্ত আলমাছ এবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরছে, এমনও শোনা যাচ্ছে। এ খবরে ভয়ে আছে আলমাছের দ্বারা নির্যাতিত নিরীহ মানুষজন। তাদের অনেকে এরই মধ্যে এলাকা ছেড়েছে। একের পর এক প্রাণনাশের হুমকিতে এরই মধ্যে রুবেল হত্যা মামলার বাদী মোমেন মিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এলাকাবাসী বলছে, জামিন পেলে আরো ভয়ংকর হতে পারে খুনের মামলার আসামি আলমাছ।</p> <p>মাদক কারবারে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মে রাতে রূপগঞ্জের নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হন মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক মেধাবী ছাত্রনেতা রুবেল। ওই মামলার প্রধান আসামি আলমাছ। এর পর থেকেই আত্মগোপনে সে। এ মামলায় জামিনের জন্য বিচারকের নাম করে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারির কাছ থেকে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম চাঁদা আদায় করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>জানা গেছে, সিনেমার ডনদের মতোই আলমাছের পোশাকআশাক ও চলনবলন। চলাফেরা করে চারজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে। উপজেলার মাছিমপুর এলাকার নসুর উল্লাহ মুন্সীর ছেলে আলমাছের বিরুদ্ধে রয়েছে এক ডজনের অধিক খুনের অভিযোগ। থানা পুলিশের তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে থাকা আলমাছ সব সময়ই সরকারি দলের সমর্থক সাজে। শিল্পপতি রাসেল ভুইয়া হত্যা মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হয়। তবে উচ্চ আদালতে আপিল করে মামলায় খালাস পেয়ে কিছু সময়ের জন্য আড়ালে চলে যায়। হত্যা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, অস্ত্র ব্যবসা, জমি দখল, মানুষের জমি দখল করে মাছের খামার তৈরিসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অজস্র অভিযোগ।</p> <p>বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আলমাছ ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নসহ বহু এলাকার সাধারণ মানুষ। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মুড়াপাড়ায় তার নামে পরিচালিত বাহিনী এখন আরো বেপরোয়া। মুড়াপাড়া অঞ্চলে শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মানুষের জমি দখল, জমি দখল করে নিজের নামে মাছের খামার তৈরি, কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় বিক্রিসহ জড়িত আলমাছ এলাকায় কাইল্লা আলমাছ নামেও পরিচিত।</p> <p>এলাকাবাসী জানায়, বর্তমানে আলমাছ বাহিনী রূপগঞ্জের ভূঁইয়া পরিবারের মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়ার মালিকানাধীন মাছুমাবাদ এলাকার ৭০ বিঘা আয়তনের একটি দিঘি দখলের চেষ্টা করছে। এ জন্য এক হিন্দু লোককে দাতা বানিয়ে ভুয়া দলিল করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে  জমি দখলে নিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দড়িকান্দি এলাকায় আশমিনা ফেব্রিকস নামের একটি টেক্সটাইল মিল স্থাপনের জন্য মোশাররফ হোসেন পাকা বিল্ডিং স্থাপন করলে বালু ভরাট করে হাতিয়ে নেয় আলমাছ বাহিনী।  পৈতৃক সম্পত্তি হারিয়ে বর্তমানে প্রাণের শঙ্কায় রয়েছেন মোশাররফ ভূঁইয়া। এ ছাড়া মুড়াপাড়ার নাসিংগল ও কর্ণগোপ মৌজায় মাছিমপুর এলাকার কৃষক শাহ আলমের আড়াই বিঘা, সোনা মিয়ার আড়াই বিঘা, মোস্তফার চার বিঘা, খলিল মিয়ার দুই বিঘা, ছালেকের দুই বিঘা, গফুর মিয়ার সোয়া বিঘা, আসলামের দুই বিঘা, আয়নালের তিন বিঘা, মাহমদের সোয়া দুই বিঘা, আবু তাহেরের এক বিঘা, মনির উদ্দির দেড় বিঘা, রিয়াজউদ্দির এক বিঘা, ছহুল উদ্দিনের এক বিঘা, খরসু মিয়ার এক বিঘা, স্বপন চৌধুরীর এক বিঘাসহ ৭০ জন কৃষকের প্রায় ২৫ একর কৃষিজমি দখল করে আলমাছ মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকরা। জবরদখল করা ভূমিতে ঝুলছে আলমাছের সাইনবোর্ড। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্তরা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করায় জমির মালিকদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে আলমাছ।</p> <p>রূপগঞ্জ থানার একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর আলমাছ ছিল থানার শীর্ষ টেরর তালিকায়। প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচিত হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান। কেউ তার বিরুদ্ধে লিখতে গেলেই মামলা ঠুকে দেয়। তার দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় ইত্তেফাকের সাংবাদিক এম এ মোমেন এবং সাংবাদিক হানিফ মোল্লা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন হত্যাও করায় করপোরেট কায়দায়। ২০০৪ সালে বানিয়াদী এলাকার শমসের, ২০০৮ সালে মীরকুঠিরছের এলাকার নয়ন, ২০১২ সালে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম বাবু ও ২০১৩ সালে বাবুর বাবা জালাল এবং একই বছর যুবলীগ নেতা শওকতকে খুনের পেছনে রয়েছে আলমাছ ও তার বাহিনীর নাম।</p> <p>এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আলমাছ বলে, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’ আমার উত্থান ঠেকাতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।</p> <p>রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আলমাছের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>