<p>মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তাকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেক বিশ্বনেতা। বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী। তাঁরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘুরে বেদনায় চোখের পানি ফেলেছেন। তাঁরাও মনে করেন, ‘মিয়ানমারে যেভাবে জাতিগত নিধন, গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও শিশু হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর বিহিত হতেই হবে।’ বিশ্বব্যাপী এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সূত্র ধরেই এখন চলছে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পালা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে থাকা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থাকা অবরোধ আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া ইইউ মিয়ানমারকে সতর্ক করে দিয়েছে যে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান না দেখালে ইউরোপের বাজারে দেশটির অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা রয়েছে, তা ঝুঁকিতে পড়বে। আমরা মনে করি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এভাবেই ক্রমে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।</p> <p>বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না করেই সমস্যার সমাধান চাইছে। দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। বরং সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এখনো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলোর কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাসের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এখনো দলে দলে রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এসব দেখে মনে হয়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপে কিছুটা নমনীয় হলেও এখনো তারা পুরনো পথ থেকে খুব একটা সরে আসেনি। আর তা না হলে এ সংকটের কোনো সমাধান হবে না। মিয়ানমারে যত দিন রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হবে, তত দিন কোনো রোহিঙ্গা সেখানে ফিরতে চাইবে না। আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী, তাদের জোর করেও ফেরানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সম্পাদিত চুক্তিও অর্থহীন হয়ে যাবে। আর যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখানে একটি পক্ষ হয়ে গেছে, তাই চুক্তির শর্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। আমরা চাই, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্ক অটুট থাকুক এবং রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দ্রুততর হোক।</p>