রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কবি ও প্রবন্ধকার যোসেফ ব্রডস্কি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৮৭ সালে। দিলখোলা ব্রডস্কি অন্ধকারের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন অশেষ যাতনা আর আলোকিত মানুষদের কাছ থেকে পেয়েছেন অকৃত্রিম ভালোবাসা। দাম্ভিক মানুষদের আহম্মকির কারণে পাকেচক্রে পড়ে ব্রডস্কি কিছুতেই আর নিজের জন্মভূমিতে থাকতে পারেননি। ১৯৭২ সালে তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। কারণ বড় বিচিত্র : ১৯৬৩ সালে এক পত্রিকায় লেখা হয় তাঁর কবিতায় অতিমাত্রায় যৌন উপাদান আছে; তাঁর কবিতা সোভিয়েতবিরোধী। সুতরাং হয়ে গেল তাঁর বিরাট অপরাধ। তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, বলা হলো তাঁর মাথায় গণ্ডগোল আছে। তাঁর আরো এক অপরাধ হলো, তিনি ছোটখাটো কাজকর্ম করেন, নিয়মিত রোজগারের কোনো উৎস নেই। কবি হিসেবেও তাঁর নাকি সামাজিক দায়দায়িত্ব পালনের মধ্যে বড্ড ঘাটতি দেখা গেছে। সুতরাং তাঁকে আদালত পর্যন্ত যেতে হলো। বিচারক মহাশয় জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কে? সরাসরি উত্তর না দিয়ে ব্রডস্কি রস মিশিয়ে উল্টো বিচারক মহাশয়কেই জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে মানবের মর্যাদায় কে তুলে এনেছে? সামাজিক পরগাছা হিসেবে তাঁকে পাঁচ বছরের সাজাও দেওয়া হয়েছিল। ১৮ মাস তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রম করেন। এভাবে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ত্যাগ করে ইউরোপ ঘুরে তিনি আমেরিকায় গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। তাঁকে ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছিল।
তিনি চলে গেলেন ভিয়েনা। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান রুশ সাহিত্যের অনুবাদক, প্রকাশক ও মার্কিন প্রফেসর কার্ল প্রফার। প্রফার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কোথায় যেতে চান। ব্রডস্কি খোলামেলাভাবেই বলে দিলেন, তিনি সত্যিই জানেন না কোথায় যাবেন। তখনই তাঁকে মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে যোগদানের প্রস্তাব দেন প্রফার। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৯৯১ সালে তিনি মার্কিন পোয়েট লরিয়েটও হয়েছিলেন। একবার তাঁর এক প্রতিবেশী রসিক ব্রডস্কিকে বললেন, যোসেফ, আপনি তো বেশ ওজন কমিয়ে ফেলেছেন। ব্রডস্কি সরস উত্তর দিলেন, আরে ভাই, আমার তো চুল কমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মনটাও কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছি। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে এই দিলখোলা মানুষটি মানুষের জটিল জগৎ ছেড়ে চলে গেছেন।
►দুলাল আল মনসুর
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের