<p>ঢাকা মহানগরী গাড়ির ভার ও চাপ আর সইতে পারছে না। এই চাপ কমাতে হবে। মেট্রো রেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালুর পর চাপ আশা করা যায় কিছুটা কমবে। কিন্তু এসব পদ্ধতি চালুর আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ছোট গাড়ি। ঢাকায় কেস প্রকল্পের আওতায় ৮৮টি ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলোর কিছু ভালো, কিছু নষ্ট, কাজ করে না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এগুলো পরিচালনা করা যায়। ছয়টি ইন্টারসেকশনে বা মোড়ে রিমোট কন্ট্রোলড সিগন্যাল চালু করা হয়েছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, কাকরাইল মসজিদের পাশে, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট ক্রসিংয়ে এগুলো চালু করা হয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপরে মালিবাগে ও মৌচাকে দুটি সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে বলেছি এ দুটি সিগন্যাল ভালোভাবে পরিচালনা করতে।</p> <p>গুলশান-১, মহাখালী, পল্টন, গুলিস্তানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ডিজিটাল সিগন্যাল পদ্ধতি স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।</p> <p>ঢাকার রাস্তায় দিনে গড়ে প্রায় ১০ লাখ গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে বাস কম। বিআরটিসির দোতলা বাস বাড়ালে ভালো হয়। কারণ একটি প্রাইভেট কারে যেখানে চারজন যাত্রী বহন করা যায়, সেখানে দোতলা বাসে ১০০ যাত্রী বহন করা যায়। আমরা প্রতিদিন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চার হাজার ট্রাফিক পুলিশকে ব্যস্ত রাখি। এর পরও এত গাড়ি সামাল দেওয়া যায় না। ঢাকায় অফিস শুরুর আগে ও শেষের পর গাড়ির যে চাপ তৈরি হয়, তা সামাল দেওয়া শুধু সিগন্যাল চালু রেখে কঠিন, ট্রাফিক পুলিশকে তাই হাত তুলতে হয়। হাতের ইশারা দিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সাংঘাতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের একেকটি দিন পার হচ্ছে।</p> <p>কলকাতা শহর এক ধরনের বিকেন্দ্রীকরণের দিকে গেছে। যানজট দূর করতে ফ্লাইওভার, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ওভারপাসসহ বড় বড় প্রকল্প করা হচ্ছে। মেট্রো রেল হলে রেহাই মিলতে পারে কিছুটা। যানজটের বড় সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি। সে তুলনায় গাড়ির বহরও বাড়ছে। সড়কে অনেক বেশি ‘ইন্টারসেকশন’ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এটাও যানজটের বড় কারণ। ইন্টারসেকশনের বাস্তবতা উতরে যাওয়ার সুযোগ আছে ফ্লাইওভারের মাধ্যমে। এমনকি রেলের লেভেলক্রসিংয়ের জ্যামও ফ্লাইওভার দিয়ে পার করে নেওয়া সম্ভব।</p> <p>ঢাকায় দোতলা বাস বাড়ানো জরুরি। উন্নত ট্রাফিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা এবং ই-টিকিট ব্যবস্থাপনা চালু করা প্রয়োজন। এগুলোর বিকল্প নেই। সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনতে হবে। যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়ানো প্রয়োজন।</p> <p><strong>লেখক : যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর পুলিশ</strong></p>