বেড়ে ওঠা ধানমণ্ডি এলাকায়। শৈশব কেটেছিল যেন স্বপ্নের মতো। এমনটাই মনে করেন রিচি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তিনটিই ধানমণ্ডিতে। স্মৃতি-বিস্মৃতির ঢাকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি যেন হারিয়ে গেলেন শৈশবের অতলান্তে, ‘আমার শৈশবে ধানমণ্ডিতে দেখেছি, রাস্তায় একটি রিকশা চলে যাওয়ার পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট পর আরেকটি রিকশা পাওয়া যেত। একটি গাড়ি চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর হয়তো আরেকটি গাড়ি পাওয়া যেত। রাস্তা এত ফাঁকা থাকত যে হাঁটতেও অনেক ভালো লাগত। আমরা তো প্রায়ই হেঁটে স্কুলে যেতাম। এখন তো এভিনিউ ধরে গাড়ির ঝড় বয়ে যায়, ক্যাকফোনির শহরে পরিণত হয়েছে ঢাকা।’—বললেন রিচি।
এ সময়ের ঢাকাকে কিভাবে বর্ণনা করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনকার ঢাকা তো আমার চোখে এক বীভৎস ঢাকা। উত্তরা, গুলশান, বনানী যেখানকার কথাই বলেন না কেন, সব এলাকারই প্রায় একই অবস্থা। কোথাও আসলে জ্যামের ঝড় থেকে বাঁচার উপায় নেই। শহরজুড়ে এতটাই জ্যাম যে আপনি একের বেশি একাধিক কোনো কাজ করতে পারবেন না। আমেরিকা থেকে দেড় বছর পর এসে এই শহরে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। বাসা থেকে দূরে কোথাও গেলে যানজটের আগ্রাসনে চরম বিরক্ত ধরে যায়। উত্তরা থেকে ধানমণ্ডি আসতে গেলে তো রীতিমতো অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।’
কেন এমনটা লাগছে, বলতে গেলে আবার শৈশবে ফিরে গেলেন রিচি। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশবের ঢাকা ছিল গাছগাছালি ঘেরা সবুজের সমারোহের ঢাকা। আগে ধানমণ্ডি, এমনকি ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার বাড়িই ছিল দোতলা। বাসার সামনে-পেছনে ছিল খোলা জায়গা। অনেক মাঠ ছিল। বিকেলে ছেলেদের ভিড় থাকত সেসব মাঠে। সবাই খেলাধুলা করত। আর এখন, আমার সেই খোলামেলা পরিসরের ঢাকা হারিয়ে গেছে শত শত অট্টালিকার ভিড়ে। খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। ছোট-বড় পার্কগুলো বেদখল হয়ে গেছে। বসবাসের অনুপযোগী নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা।’
কিছু দিন আগে ঢাকার বাইরে দাদুবাড়ি, নানুবাড়ি ঘুরে এসেছেন তিনি। এত ভালো লেগেছে যে এক সপ্তাহের মধ্যে আবার সেখানে গিয়েছেন। প্রশংসা করলেন মফস্বল শহরগুলোর। কথায় কথায় চলে এলো বর্তমান সময়ে ঢাকার রেস্টুরেন্টের প্রাচুর্যের গল্প, ‘আমার দেখা ধানমণ্ডির প্রথম ফাস্টফুডের দোকান হলো লাবাব্বা। বর্তমানে যে স্টার কাবাবটা আছে, তার উল্টোদিকে ছিল। এ ছাড়া নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ওসব এলাকায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ছিল। এই লাবাব্বাতেই আমরা ভিড় করতাম ফাস্টফুড খাওয়ার জন্য। এর অনেক দিন পর আরেকটি হলো ইয়ামিইয়াম। এটা ছিল জিগাতলার মোড়ে। এখন তো মনে হয় প্রত্যেক বাড়িতেই একটি করে ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে! তখনকার দিনে অবশ্য রেস্টুরেন্টগুলোতে এত পদের খাবার পাওয়া যেত না। কিন্তু বিদেশি খাবারের সংখ্যা বাড়লেও দিন দিন দেশীয় খাবারের সংখ্যা কমছে রেস্টুরেন্টগুলোতে।’
এখন আমেরিকার নাগরিক। সেখানেই সংসার পেতেছেন। বর্তমান সময়ের ঢাকার যেসব বিষয় নিয়ে তিনি হতাশ তার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথমত দেশের সব মানুষকে ঢাকামুখী হতে দেওয়া যাবে না। এই ভাবনাটা অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের মাথায় আসা উচিত ছিল। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনের লক্ষ্যই যেন ঢাকায় আসা। এর কারণও রয়েছে। যদি অন্য জেলা শহরগুলোতে কাজের সুযোগ বাড়ত। তাহলে ভিড়টা একটু হলেও ঢাকায় কম হতো। এভাবে চললে একটা সময় ঢাকার পরিণতি কী হবে কল্পনাও করা যায় না। একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতিশিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবশ্য এরই মধ্যে যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে—এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।’
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
পরকীয়া প্রেমিকের স্ত্রী-কন্যার মারধরের শিকার চিত্রনায়িকা রাকা
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...