জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থাকে (ইউএনআরডাব্লিউএ) সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যেও ফিলিস্তিনের শরণার্থীশিবিরে স্কুলগুলো চালু রেখেছে সংস্থাটি। গতকাল গাজা উপত্যকার রাফা শরণার্থী শিবিরে এভাবেই হাসিমুখে স্কুল থেকে ফেরে শিশুরা। যদিও শিশুদের এই হাসি কতদিন বজায় থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ছবি : এএফপি
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য গঠিত জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থায় (ইউএনআরডাব্লিউএ) যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো সহায়তা দেবে না। গত শুক্রবার মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংস্থাটির আচরণ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে তা আর সংশোধনযোগ্য নয়। আর এ কারণে ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে সব ধরনের সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ‘অপমান’ করল।
১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। এদের সহায়তার জন্যই গঠিত হয় ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি’ (ইউএনআরডাব্লিউএ)। সংস্থাটি ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিম তীর, জর্দান, সিরিয়া ও লেবাননে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আর এ কাজে তাদের যে অর্থ ব্যয় হয়, তার বেশির ভাগ এত দিন যুক্তরাষ্ট্র একাই দিত। ২০১৬ সালেও তারা ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়েছে।
কিন্তু গত জানুয়ারিতে সেই সহায়তা অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার বাতিল করা হলো পুরোটাই।
গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেদার নওয়ার্ট বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন খুবই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইউএনআরডাব্লিউএ আর কোনো মার্কিন সহায়তা পাবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা বলেন, এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ‘অপমান’ করা হলো। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও যুক্তরাষ্ট্র এই সত্য পাল্টাতে পারবে না যে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিপ্রক্রিয়ায় তারা আসলে কেউ না।’
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হোসাম জোমলোত বলেন, ‘ফিলিস্তিনি শরণার্থীসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইসরায়েল যে তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দিচ্ছে। তারা শুধু বর্তমান পরিস্থিতিই ঘোলা করছে না, ভবিষ্যতের শান্তির আশাটুকুও নষ্ট করছে।’
ইউএনআরডাব্লিউএর মুখপাত্র ক্রিস গুনেস এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অসংশোধনযোগ্য যে আচরণের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র এনেছে, তা আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউএনআরডাব্লিউএর ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে। তিনি সংস্থাটির আর্থিক ঘাটতি মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ইউএনআরডাব্লিউএতে আগের চেয়ে আরো বেশি অর্থ সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, ‘ইউএনআরডাব্লিউএ ভেঙে পড়লে তার মাসুল সবাইকে দিতে হবে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন জানাই। যেসব কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সংকট জিইয়ে রাখছে, সেগুলোর একটি হলো ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সমর্থন দেওয়া।’ অবশ্য ইসরায়েলের অনেকেই মনে করেন, ইউএনআরডাব্লিউএ দুর্বল হয়ে পড়ার মানে হলো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও জঙ্গিবাদের আরো উত্থান ঘটা।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি কারণে ইউএনআরডাব্লিউএর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অসন্তোষ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ইউএনআরডাব্লিউএ মনে করে, ওই পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দেওয়া উচিত। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
পরকীয়া প্রেমিকের স্ত্রী-কন্যার মারধরের শিকার চিত্রনায়িকা রাকা
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...