<article> <p style="text-align: justify;">কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী লালমাই পাহাড় থেকে অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। এতে একদিকে যেমন পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সেখানকার বন্য প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরে লালমাই পাহাড়ের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। পাহাড়ের ‘মাটিখেকোদের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">লালমাইয়ে পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও একাধিক চক্র একের পর এক টিলা ও পাহাড় কাটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি লালমাই পাহাড় রক্ষায় জনস্বার্থে একটি রিট করে হাইকোর্টে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লালমাই পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। এর পরও থেমে নেই পাহাড় ও টিলা কাটা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় লোকজন বলছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার অংশ জুড়ে লালমাই পাহাড়। এ ছাড়া কুমিল্লার আদর্শ সদর ও বরুড়া উপজেলার কিছু অংশ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি পাহাড়ের মাটি কাটছে। সঙ্গে কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ের কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বড় ধর্মপুর, ধর্মপুর, রতনপুর, বিজয়পুর, সালমানপুর, জামমুড়া, রাজারখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে এ ব্যাপারে অভিযান চালানো হলেও ‘মাটিখেকোরা’ থামছে না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের বড় ধর্মপুর মধ্যপাড়া এলাকায় কম্পানিবাড়ির পশ্চিম পাশে অবাধে কাটা হয়েছে পাহাড় ও টিলার মাটি। ওই এলাকায় বেশির ভাগ পাহাড় ও টিলা সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বড় ধর্মপুরে প্রতিষ্ঠিত জাপানি স্কুলের পাশে বন বিভাগের একটি পাহাড়ের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। রাতের আঁধারে একটি চক্র মাটি কেটে নেয় বলে স্থানীয় লোকজন জানায়। পাশের শ্রীবিদ্যা এলাকায়ও অবাধে টিলার মাটি কাটা হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সালমানপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কের বিপরীতে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। এ পার্কের পেছনে আরেকটি স্থানে দেয়াল তুলে ভেতরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। রাজারখোলা ও জামমুড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক থেকে একটু ভেতরে বাড়ি ও গাছপালার আড়ালে পাহাড় কাটা হয়েছে। বেশির ভাগ পাহাড়ের মাটি রাতের আঁধারে কাটা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">লালমাই পাহাড়ের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, কয়েক দিন পর পর টিনের বেড়া দিয়ে পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে নিয়ে গেছে চক্রের লোকজন। কোথাও কোথাও পাহাড় কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পাশের সালমানপুর ও আশপাশের এলাকায় সম্প্রতি বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এতে পাহাড়ের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় লোকজন জানায়, আট বছর আগে লাকসামের ইছাপুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন ও সাইফুদ্দিন—দুই ভাই এবং কুমিল্লা নগরীর নোয়াগাঁও এলাকার মো. ইউনুস মিয়া ওই টিলা কেনেন। কিছুদিন আগে খবর পান তাঁদের টিলা থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে নাসির উদ্দিন বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ জানতে পারি, ‘আমাদের টিলা কাটা হচ্ছে। কিন্তু কে বা কারা কাটছে, তা জানতে পারিনি। তাই আইনি পদক্ষেপও নিতে পারিনি। পরে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছি।’</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য পাহাড় রক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে কুমিল্লায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নজরে পড়ছে না। লালমাই পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধে বাপা প্রশাসনের কাছে বহুবার লিখিত অভিযোগ করেছে; কিন্তু কাজ হয়নি।’</p> <p style="text-align: justify;">কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, অবাধে পাহাড় কাটায় ফল-ফসল আবাদে বিঘ্ন ঘটে। পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য পাহাড় রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, ‘পাহাড়ের বড় ধর্মপুর এলাকার জাপানি স্কুলের পাশের কিছু অংশ একটি পক্ষ কেটে ফেলেছে। সেখানে আমরা সীমানা নির্ধারণ করে তা বন্ধ করেছি। এ ছাড়া অন্যত্র যেন কেউ পাহাড় না কাটতে পারে, সেদিকেও নজর রাখছি।’</p> <p style="text-align: justify;">কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যখন খবর পাচ্ছি, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’</p> <p style="text-align: justify;">কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোনোভাবেই পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করা যাবে না। সেখানে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। কোথাও পাহাড় কাটার তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।  এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’   </p> </article>