<p>২০০৯ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে টানা ১৫ বছর হয়নি খুলনার কয়রায় শিব পূজা ও চড়ক মেলা। প্রভাবশালীদের ঘেরের লবণাক্ত পানির প্রভাবও অন্যতম কারণ ছিল। স্থানীয় এমপির প্রচষ্টোয় লবণ-পানিমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক হয়েছে শিব পূজা ও চড়ক উৎসব পালন। তাই ১৫ বছর পর আনন্দের সীমা নেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শিব পূজা ও চড়ক মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সাথে ছিলে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। </p> <p>শিব পূজা, গ্রামীণ চড়ক উৎসব ও ঘোড়দৌড় দেখতে সেখানে বিভিন্ন বয়সী কয়েক হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। ছিল উপচেপড়া ভিড়। ঢাকঢোল বাজনার সঙ্গে উলুধ্বনি। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে বেশিরভাগ হিন্দু নারীরা মন্দিরে শিব পূজা দিতে আসেন। শিবের মাথায় দুধ-ডাবের পানি ঢালেন। </p> <p>শনিবার বিকালে খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ফাঁকা বিলের ভেতরে শতবর্ষী লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব মন্দিরে দীর্ঘ ১৫ বছর পর শিব পূজা ও গ্রামীণ চড়ক মেলায়  এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পুরো এলাকায় ছিলে উৎসবের আমেজ। ভগবান শিবকে তুষ্ট করতে দুধ, ডাবের পানি, দই, ঘি, ফুল ও বেলপাতা দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করার মধ্য দিয়ে পূজার সুভারম্ভ হয়।  পূজাস্থলে নারী ভক্তবৃন্দের উপস্থিতি ছিলে চোখে পড়ার মতো। স্বামী, সংসার ও জগতের শান্তি কামনায় আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষের পদচারণায় মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। </p> <p>মেলার অন্য প্রান্তে  দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষের অপলক চোখ ৩০ ফুট উচ্চতার কাঠের দণ্ডের দিকে। একজন মানুষ শূন্যে ঘুরছেন একটি দড়িতে ঝুলে। দড়িটি বাঁধা ওই মানুষটির পিঠের চামড়ায় গাঁথা বড় দুটি বড়শির সাথে। চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাকঢোল। ঘুড়ানো হচ্ছে কাঠের দণ্ডটি। আর তাতেই ঝুলে চারিদিকে গোল চক্কর খেলেন কয়েক যুবক। তাদের সঙ্গে থাকা ফুল-জল, আবির, কলা, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যাদি ছিটিয়ে দেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের দিকে। </p> <p>শিব পূজা, চড়ক মেলা ও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে ধর্ম যার যার হলেও উৎসব কিন্তু সবাই উদযাপন করেন। তার প্রমাণ এই মেলায় বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি। প্রাচীন এই শিব মন্দির রক্ষায় অতীতের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। </p> <p>শিব পূজা ও চড়ক মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মনি রায় বলেন, বাপ-দাদার আমলে হওয়া শিব পূজা আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এই শিব পূজা ও  চড়ক মেলা উপলক্ষে পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। এ মেলা শেষ পর্যন্ত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকে না। হাজার হাজার মানুষের সমাগমে  এটা মিলনমেলায় পরিণত হয়। </p> <p>শিব পূজায় অংশ নেওয়া অনামিকা সরকার বলেন, শিব পূজা করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত উপবাস থাকতে হয়। আর এই উপবাস পূজার পর ভাঙা হয় এবং সারাদিন নিরামিষ খেতে হয়। শুধু তাই নয়, শিব পূজা করলে ভালো একজন স্বামীও মেলে। </p> <p>উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশীত রঞ্জন মিস্ত্রী বলেন, লবণ পানির ঘেরের কারণে দীর্ঘদিন পূজা পালন বন্ধ ছিল। সংগ্রাম ও প্রচষ্টোয় লবণাক্ত পানি মুক্ত করে ১০০ বর্ষে লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব মন্দিরে শিব পূজা ও চড়ক মেলা পালন করতে পেরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আনন্দের সীমা নেই। এসময় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা-৬ সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আলম, অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশীত রঞ্জন মিসি্ত্র, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ শিকারীসহ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। </p>