<p>বাবা ছিলেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। বিভিন্ন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হয়ে সঠিক বিচারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই মানুষটিকেই দায়িত্বরত অবস্থায় হত্যা করে পালিয়ে যায় খুনিরা। আর এই ঘটনার দীর্ঘ নয় বছর পার হলেও তার বিচারের আশা জিইয়ে রাখতে রাখতে এখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গৌতম কুমার রায়ের ছেলে গৌরব রায় ঝলক (২২)।</p> <p>গৌতম কুমার রায় ছিলেন বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে ধোলাইখালের মোহন সাহা স্ট্রিটের আশরাফ ইলেকট্রনিক্সের সামনে নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। এই মামলায় কয়েকজনকে আটক করলেও তারা জামিনে আছে। </p> <p>পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এসআই গৌতম রায়ের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জে। তিনি রাজধানী ঢাকার বংশাল থানায় পুলিশের এস আই পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরিসূত্রে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার ওয়ারীতে বসবাস করতেন। ২০১০ সালের ১৯ শে এপ্রিল পেশাগত কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন গৌতম। পথিমধ্যে ধোলাইখালের মোহন সাহা স্ট্রিটের আশরাফ ইলেকট্রনিক্সের সামনে সন্ত্রাসীরা গৌতমকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার গৌতম রায়কে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাগণও হাসপাতালে ছুটে যান। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। কয়েকজন আটকও হয়। ২০১৩ সালে এ মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তুলে আদালতে নারাজি আবেদন করেন গৌতমের পরিবার। এরপর ২০১৫ সালের শুরতেই ফের আদালতে মামলার চূরান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর চলে যায় চার বছর। এর মধ্যে পরিবারটির কেউ কোনো ধরনের খবর নেয়নি। এ অবস্থায় পরিবারটি আর বিচারের আশা করছেন না। শুধু বলছেন পুলিশই পুলিশ হত্যার বিচার করতে পারলো না। এটাই এখন আক্ষেপ।</p> <p>স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, গৌতম রায় গৌরীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নেত্রকোনার পূর্বধলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পূর্বধলা ভোরের কাগজের প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা কমিটি,  জেলা উদীচী ও খেলাঘরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি অধিকার আদায়ে স্থানীয় কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সংঘটিত করে এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাই এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও বিচার না পাওয়ায় পরিবারের মতো এলাকাবাসীও গৌতমের বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।</p> <p><br /> দাম্পত্য জীবনে এসআই গৌতম রায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে গৌরব রায় ঝলক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। মেয়ে অদিতী রায় ঝিলিক পড়াশানা করছেন ঢাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে । এই বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।</p> <p>নিহত গৌতমের ছোট ভাই তিলক রায় বলেন, যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছিল, সেই পিস্তল পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। আসল অপরাধীকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। তাই আমরা অভিযোগপত্র (চার্জসীট) নিয়ে আপত্তি তুলে আদালতে নারাজি পত্র দিয়েছিলাম।</p> <p>তিনি আরো বলেন, অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন। এখন আর কেউ আমাদের সাথে যোগোযোগ করেন না। </p>