<p>নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী বাজারে ব্গেমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় দু‌ই পক্ষের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের সময় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সোমবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় চৌমুহনী বাজারে যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় ১২ পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৪ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং অপর আহতদের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সংসদ সদস্য কিরন মেয়র ফয়সালকে অপরদিকে মেয়র ফয়সাল তাকে হত্যার জন্য সংসদ সদস্যের সন্ত্রাসীদের দায়ী করছেন।</p> <p>জানা যায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ অপহরণ মামলার এক আসামিকে আটক করলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ্যডভোকেট আকতারুজ্জামান আনসারী বিষয়টি মিমাংসা করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে চান। এ সময় পুলিশ ওই আসামিকে না ছাড়ায় আনসারীসহ কিছু লোকজন চৌমুহনী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবোরোধ করে। ওই সড়ক দিয়ে সে সময়ে  নোয়াখালীর উন্নয়ন কনসার্টে গান গাইতে আসছিলেন সংসদ সদস্য মমতাজ। তিনি আটকা পড়েছেন খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র সমর্থকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আনসারীকে বেদম মারধর করে অবরোধ তুলে দেয়। আ্যডভোকেট আনসারীর ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে চৌমুহনী পাবলিক হল চত্বরে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে।</p> <p>বিকেল ৩টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নান বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হলে সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনের সমর্থকরা আসার আগেই চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আখতার হোসেন ফয়সালের সমর্থকরা জায়গা দখল করে নেয়। পরে সংসদ সদস্যের সমর্থনে একটি মিছিল সমাবেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সালের উপস্থিতিতে তার সমর্থকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য সমর্থকদের কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত কর্মীরা চেয়ার ভাঙচুর করে। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। বিকেলে সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। উভয় গ্রুপ ইট-পাটকেল, লাঠিসোটা ব্যবহার করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে  পিংকু (৩০), রাসেল (২৪), সবুজ (২৩) সুমন (৩০), বজদাস (৩৮) ফয়েজ আহমেদ (৩২), বাকের (৩৫) ও ১২ পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১ জনসহ ৪ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে  এবং অন্যান্যদের বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।</p> <p>খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড গুলি ও ৮ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এদিকে সংঘর্ষ চলকালে গোটা চৌমুহনী বাজারে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের সকল দোকার পাট বন্ধ হয়ে যায়। বাজারের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। </p> <p>বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান শেখ জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়া হয়। এ ঘটনায় ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। </p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরন কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আ্যডভোকেট আনসারীর ওপর হামলার প্রতিবাদসহ সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে চৌমুহনী পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে লক্ষ্মীপুরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। মেয়রের প্রত্যক্ষ ইন্দনে তারা আমার নেতা-কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এ ছাড়া তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা সমাবেশে আসার পথে হামলা চালিয়ে আহত করায় অনেকে সমাবেশে আসতে পারেনি। এ সময় বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালানো হয়।</p> <p>অপরদিকে চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আখতার হোসেন ফয়সাল জানান, সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন আমাকে হত্যা করার জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গুলি ছুড়েছে। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলিতে আমার তিন কর্মী পিংকু, রাসেল ও সবুজ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সংসদ সদস্য যাদের নিয়ে চলাফেরা করেন তারা সকলেই মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী। তার সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের কারণে পুরো বেগমগঞ্জে সন্ত্রাস ও মাদকের আখড়া হয়েছে। তিনি সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ করার জন্য সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেছেন। বিষয়টি আমি আমাদের নেতাদের অবহিত করব। বেগমগঞ্জে তার পায়ের তলা মাটি নেই, তিনি সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলাফেরা করেন তা সকলে অবগত আছেন।</p> <p>বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাক্তার জাফর উল্লাহ এ ঘটনাটিকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে বলেন, সামনে সংসদ নির্বাচন এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য দুঃখের। তারপরও আমি খবর পেয়ে সংক্ষিপ্তভাবে সমাবেশ শেষ করেছি।</p>