<p>লোক দেখলেই আতকে উঠে। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। আগুন, ধারালো কোনো জিনিস ও পানি দেখলে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। চোখে মুখে কেবলই আতঙ্কের ছাপ। নিজের নাম বলতে পারে না। মায়ের কথা জানতে চাইলে সে নিজের হাত গলায় নিয়ে জবাই করার মতো ইঙ্গিত দেয় এবং বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই রান্না ঘরে চুলার আগুনকে দেখিয়ে আ, উ করে। এই রকম একটি ৪ বছর বয়সের শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের মহেশচাতুল গ্রামে। উত্সুক লোকজন ভিড় জমাচ্ছে এক নজর দেখার জন্যে।</p> <p>গতকাল শনিবার রাতে খবর পেয়ে ওই গ্রামে গেলে জানা যায়, মো. ফজলুর রহমানের মেয়ের জামাই রিকশাচালক আইনুল হক আশুগঞ্জ থেকে নিয়ে এসেছে শিশুটিকে। আইনুলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। আইনুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের কোলে শিশুটিকে বসে থাকতে দেখা গেছে। রাবিয়া বলেন, তাঁর স্বামী ব্রাহ্মবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা শহরে রিকশা চালায়। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শহরে রিকশা চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। এ সময় তিনি একটি সড়কের পাশে শিশুটিকে ঘুরাফেরা ও কাঁদতে দেখেন। কাছে গেলে শিশুটি আইনুলকে জড়িয়ে ধরে। তখন সেখানে লোকজন জড়ো হয়। স্থানীয়রা খোঁজ নিয়ে শিশুটির পরিবারের কোনো সদস্যের সন্ধান পায়নি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে অস্ফুট ভাষা শুনে আশুগঞ্জের লোকজন শিশুটিকে রোহিঙ্গা পরিবারের বলে ধারণা করছে। তবে কেউ নিতে না চাওয়ায় রিকশাচালক আইনুল সেখানকার স্থানীয় লোকদের জানিয়ে শিশুটিকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। ওই বাসায় আইনুল তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন।</p> <p>এদিকে ঈদের কয়েকদিন পর আইনুল হক সপরিবারে নিজের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামে আসেন। বাড়িতে দুদিন কাটানোর পর আইনুল স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে রেখে আশুগঞ্জে চলে যান। গত শনিবার কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে নিয়ে আইনুলের স্ত্রী রাবেয়া তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার মহেশ্চাতুল গ্রামে যান। শিশুটিকে দেখার জন্যে ওই বাড়িতে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। রাবেয়া বলেন, তাঁর চারটি সন্তান আছে। তারপরও তিনি ওই শিশুটিকে ফেলে দিতে পারবেন না। তাকে সন্তান স্নেহে মানুষ করতে চান। তবে শিশুটিকে নিয়ে আতঙ্কেও আছে তাঁরা। রাতে ঘুমাতে চায় না। সারা রাত শুধু হাউমাউ করে কাঁদে। ঠিকমতো খেতেও চায় না।</p>