<div> জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিখুঁত প্রতারণার মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আকলিমা আক্তারের সাথে এক বছর ১০ মাস ঘর-সংসার করা হয়েছে। একটি সন্তানও এসেছে তার কোলজুড়ে। কিন্তু লম্পট স্বামী বাবুল হোসেন ওরফে বাবু এখন বেঁকে বসেছে। সে বিয়ে করতে রাজি নয় তাকে। কথিত বন্ধুর কাছে ২৩ দিন বয়সি শিশুকেও মায়ের অমতে পালক দেয়া হয়েছে। নিজের বিয়ের স্বীকৃতি ও বিচার চেয়ে গত বুধবার লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সে মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুলের পক্ষ নিয়ে প্রতাপশালী জাফর উল্যাহ দুলাল হাওলাদার আকলিমার বাবা লন্ড্রি দোকানদার মো. হোসেনকে (৫৮) রোববার মারধর করেছে। এরআগেও তাকে দুইবার প্রকাশ্যে পেটানো হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ। দুলাল হাওলাদার রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে নারাজ ।এদিকে মামলা প্রত্যাহার না করলে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে ওই নেতা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা।<br /> অভিযোগ রয়েছে, পুলিশও আসামিদের পক্ষ নিয়েছে। আসামিদের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতার আর্শীবাদ থাকায় মামলার বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের কথায় কানে তুলছেন না।এতে বর্তমানে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এনিয়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।<br /> স্থানীয় লোকজন ও মামলার এজাহারে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার চরপক্ষী গ্রামের মো. হোসেনের মেয়ে আকলিমাকে দীর্ঘদিন ধরে বাবুল হোসেন ওরফে বাবু (৩০) উত্যক্ত করে আসছে। সে একই এলাকার আলী আকবর মোল্লার ছেলে। ঘটনাটি বাবুলের পরিবারের লোকজনকে জানালেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সকালে নানার বাড়ি থেকে আকলিমা তাদের বাড়িতে আসার পথে উদমারা গ্রামের আবদুর হাজী বাড়ির সামনে পৌঁছলে বাবুল কয়েক সহযোগীকে নিয়ে তার পথরোধ করে। এসময় ধারলো অস্ত্রের মুখে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে তাকে রায়পুরের একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়। পরদিন ঢাকায় গিয়ে বিয়ে করা হবে বলে তাকে লঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা উত্তরায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে। আকলিমা বিয়ে করতে বাবুলকে চাপ দিলে সে নানা তালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে আকলিমা এক সন্তান জম্ম দেয়। যখন ওই সন্তানের বয়স ২৩ দিন হয়,তখন আকলিমাকে একটি খাবার হোটেলে নিয়ে অচেতন করা হয় । এসময় এক কথিত বন্ধুর কাছে শিশুকে পালক দেয়া হয়েছে বলে পরে জানতে পেরেছে আকলিমা। নানা নাটকীয়তার পর বাবুল গত ৩১ আগষ্ট তাকে  রায়পুরের বাংলাবাজারে নিয়ে আসে। এসময় 'বোনের বাড়ি থেকে আসছি' বলে সে তাদেরকে রাস্তায় রেখে সটকে পড়ে।এরপর থেকে তার খোঁজ নেয়া হয়নি।<br /> এ ঘটনায় সে গত বুধবার লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।এতে বাবুল ও তার পবিবারের ৪ সদস্যের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো দুইজনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিন উদ্দিন। মামলা করার পর হায়দরগজ্ঞে প্রকাশ্যে আকলিমার বাবাকে পিটিয়েছেন দুলাল হাওলাদার। পুলিশকে জানিয়েও কোন ফল আসেনি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের।<br /> এ ব্যাপারে প্রতারিত আকলিমা বলেন, বাবুল কৌশলে আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। সে এখন অন্য জায়গায় বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার সন্তান কোথায় আছে যানি না। ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে পরিনতি ভালো হবে না বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।<br /> মো. হোসেন বলেন, মামলা করার কারণে হায়দরগঞ্জে তিনবার রাস্তায় মাইর (মারধর) খাইছি। আংগ টিয়া (আমাদের টাকা) নাই, বিচার ও নাই। মামলা না তুইল্লে ঘরবাড়ি জ্বালাই দিবে। এলাকা ছাড়াও কইরবো। হেরা (তারা) বিভিন্নজনের কাছে হুমকি-ধমকি দিতেছে।<br /> এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বাবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।তবে আওয়ামী লীগ নেতা জাফর উল্যাহ দুলাল হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির। মেয়েটার চরিত্র খারাপ। তাদের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে দুই হাজার লোক মিছিল করেছে। হোসেনকে আমি মারধর করিনি- যে বলেছে,তাকে আমার সামনে ধরে নিয়ে আসেন। মামলা প্রত্যাহার করতে আমি কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করিনি।<br /> জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ১নং উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদ উল্যাহ বিএসসি বলেন, প্রতারিত মেয়ের মা-বাবা ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে আমি ঘটনাটি সত্য বলে জেনেছি। আমি তাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। এখন মামলা তুলে নিতে মারধর ও হুমকি দেয়ার অমানবিক।</div> <div> মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিন উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার কওে বলেন, এ ঘটনায় জেলা সহকারী পুলিশ সুপারও (সার্কেল) তদন্তে এসেছেন। মামলার  আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অধিক তদন্তের জন্য ঢাকাও যেতে হবে।<br /> মামলার প্রত্যাহার করতে বাদীর বাবাকে আওয়ামী লীগ নেতার মারধরের বিষয়ে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাক্ষী-প্রমাণ পাইনি। তারপরও প্রভাবশালী ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।<br /> জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা সহকারী পুলিশ সুপারও (সার্কেল) সৈকত শাহিন বলেন, আমি তদন্তে গিয়ে বাদীকে পাইনি। এলাকার লোকজন তার বিরুদ্ধে খারাপ রিপোর্ট দিয়েছে। মারধর ও হুমকি দেয়ার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।</div>