<p>প্রাক বাজেট ২০১৭-১৮ আলোচনায় নিজের মতামত ও চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন (এফসিএ, এফসিএমএ, সিপিএফসি অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ</p> <p><strong>প্রশ্ন : ২০১৭-২০১৮ সালের বাজেটের ধরন, আকার, আয়তন ও প্রবৃদ্ধি এবং এর যথার্থতা সম্পর্কে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন।</strong></p> <p>২০১৭-১৮ সালের বাজেট এই সরকারের সাম্প্রতিক বিগত বৎসরগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং বিশেষ করে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো,  সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০), রূপকল্প ২০২১ এবং জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) ইত্যাদির লক্ষ্যমাত্রাকে সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাজেটের আকার প্রায় আনুমানিক ৪,০০,০০০ কোটি টাকার ওপরে হতে পারে। যেখানে মোট রাজস্বের পরিমান আনুমানিক ২,৮২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে অনুমান করা যায় এবং প্রবৃদ্ধির লড়্গ্যমাত্রা হবে ৭.৪। এই ধরনের বাজেটের যথার্থতায় বলা যায় যে, ঘোষিত উপরোক্ত বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিতে পরিকল্পনার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং জাতির প্রত্যাশা পূরণে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এই সরকার তার মেয়াদকালে ব্যাপক অবকাঠানো খাতের উন্নয়নকে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ২০১৭-১৮ বাজেটে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব ও প্রাধান্য পাবে।</p> <p><strong>প্রশ্ন : ২০১৭-১৮ সালের এই ধরনের বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা।</strong></p> <p>বিগত কয়েক বৎসরের বাজেটের আকার মোট রাজস্ব এবং প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনা করলে বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র ফুটে উঠবে। ২০১৪-১৫ এর প্রকৃত বাজেট, ২০১৫-১৬ সংশোধিত বাজেট এবং ২০১৬-১৭ বাজেটের মোট আকার ছিল যথাক্রমে ২,০৪,৩৭৬ কোটি, ২,৬৪,৫৬৫ কোটি এবং ৩,৪০,৬০৫ কোটি টাকা এবং মোট রাজস্বের পরিমান ছিল যথাক্রমে ১,৪৫,৯৬৫ কোটি, ১,৭৭,৪০০ কোটি এবং ২,৪২,৭৫২ কোটি টাকা। উলেস্নখ্য যে, ২০১৫-১৬ সালে মোট বাজেট ছিল ২,৯৫,১০০ কোটি টাকা যেখানে ৩০,৫৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেট ঠিক করা হয় এবং একইভাবে রাজস্বের পরিমান মূল বাজেট ২০৮,৪৪৩ কোটি থেকে প্রায় ৩১,০৪৩ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত লড়্গ্য ঠিক করা হয়েছিল। এই সংশোধনের হার মোট আকারের ১০.৩৫ শতাংশ এবং মোট রাজস্বের ১৪.৮৯ শতাংশ। সুতরাং বলা চলে ২০১৫-১৬ অর্থ বত্সরে বাজেট বাসত্মবায়নের হার ৮৯.৬৫ শতাংশ। এছাড়া ঐ বৎসর সমূহে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৬.৬, ৭.১ এবং ৭.২ শতাংশ ছিল। উল্লেখ্য যে, ২০১৫-১৬ অর্থ বত্সরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। রাজস্বের নেট সম্প্রসারণ এবং এডিপির বাস্তবায়ন এবং কাজের গুনগত মান বৃদ্ধি পেলে বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটাই সহজ হবে।</p> <p><strong>প্রশ্ন : প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সংশয় প্রকাশ করেছে।</strong></p> <p>গত কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের এসক্যাপ অনুমান করেছে যে, চলতি অর্থবৎসরে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬.৮ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবৎসরে ৬.৫ শতাংশ অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন আবন্তর্জাতিক সংস্থা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অনুমান করেছিল। তাদের অনুমানকে ছাড়িয়ে ওই বৎসর ৭.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সবসময় সব অনুমান সমানভাবে কার্যকরী নয়। তা ছাড়া চলতি অর্থ বত্সরে প্রথম দশ মাসের প্রবৃদ্ধি ৭.২৪ শতাংশ এবং বৎসর শেষে এই প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশ হবে। সুতরাং এখন প্রবৃদ্ধি ৬ এর বৃত্ত থেকে ৭ এর বৃত্তে পৌঁছে গেছে।</p> <p><strong>প্রশ্ন : ২০১৭-১৮ সালের প্রসত্মাবিত বাজেটে কোন কোন খাত অগ্রাধিকার পাবে-</strong></p> <p>বর্তমান সরকার তার পুরো দুই মেয়াদকালে প্রায়ই প্রতিটি বাজেটের মোট কর্মস–চী ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রায় ৪০ শতাংশের ওপরে বিভিন্ন সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ দিয়েছে। এই বৎসর বাজেটেও অনুরূপ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। সরকার উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের কৌশল হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের/ডিভিশনের আওতায় ১০টি প্রকল্পকে Fast Track প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সেতু সংযোগ, দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন, ঢাকার এমআরটি, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ী জ্বালানী প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র এবং রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই সমসত্ম মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই বাজেটে প্রকল্পগুলোর সংশ্লিষ্ট খাতকে অগ্রাধিকার দিবে। আগামী  প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর আলোকে বলা যায় যে, টাকার অংকে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্ব্বোচ বরাদ্দ প্রায় ৫৭০ বিলিয়ন টাকা, জনপ্রসাশন খাতে ৪৬৭ বিলিয়ন টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৪০৮ বিলিয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণখাতে ৩২৩ বিলিয়ন এবং জ্বালানী ও বিদ্যুত্ খাতে ১৬০ বিলিয়ন টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বত্সরের তুলনায় সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে যা মোট টাকার অংকে প্রায় ১২৪ বিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পাবে একইভাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা ও কৃষিখাত সমূহে যথাক্রমে ৪১ বিলিয়ন, ৩৬ বিলিয়ন, ২১ বিলিয়ন, ১৮ বিলিয়ন, ১৬ বিলিয়ন এবং ১০ বিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পাবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট, ব্যবসা ব্যয় হ্রাস, বৈশ্বিক প্রতিযোগীতামূলক অবস্থান, অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে  সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ ছাড়াও ব্যয়ের গুনগতমান, বাস্তবায়ন সময়, মোট প্রকল্প ব্যয়, ইত্যাদির উপর অধিক গুরম্নত্বারোপ করে সঠিক ব্যয়ে, সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুনে ও মানে প্রকল্প কার্য সমাপ্তের জন্য সঠিক মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রকল্প বাসত্মবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এক দেশ বা অঞ্চলে কেন্দ্রিভূত না করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠান সমূহকে সমসুযোগ প্রদান করলে প্রকল্প বাসত্মবায়নে কিছু ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। চলমান বৃহৎ প্রকল্প গুলোর বাস্তবায়নের হার সময় সময় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেমন-বাংলাদেশ দৈনিক কতটুকু বা কত কিলোমিটার রাসত্মা সম এককে (equivalent unit)) তৈরি হচ্ছে, দৈনিক কত কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে (সম এককে) ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য সুপারিশ করছি। সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর কারনে সুফলগুলো সুস্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি।  আসন্ন বাজেটে প্রবৃদ্ধি সঞ্চয়ী বৃহত্ ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোগত প্রকল্প সমূহ এবং স্থবির বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা কলাকৌশল অগ্রাধিকার পাবে।</p> <p><strong>প্রশ্ন : মূল্য সংযোজন কর ও সম্প–রক শুল্ক আইন, ২০১২, ১লা জুলাই ২০১৭ থেকে কার্যকর হওয়া নিয়ে বর্তমান যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে -সে সম্পর্কে মন্তব্য করুন।</strong></p> <p>নুতন মূসক ও এসডি আইন ২০১২ মৌলিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত একটি আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পরোক্ষ কর ব্যবস্থা যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপকরণ কর রেয়াতের ব্যবস্থাসহ রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি সহজতর হবে। এই আইন বাস্তবায়নের অন্যতম নির্ণায়ক হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। তথ্য প্রযুক্তি তথা অনলাইন কানেক্টিভিটির সার্বিক সফলতার উপর এই আইনের বাসত্মবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। ২০১২ এর ১লা জুলাই থেকে প্রযোজ্য হওয়ার কথা থাকলেও এই আইনের কতিপয় ধারা এবং মূসক হার ১৫ শতাংশ নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় কার্যকর হয়নি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের জন্য ভ্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মোট রাজস্ব আয়ে এটির স্থান প্রথম এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ রাজস্ব মূসক থেকে আদায় হচ্ছে। এই আইনের আওতায় প্রায়ই সকল ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ১৫ শতাংশ ম–সক আদায় অবশ্যই জীবন যাত্রার ব্যয়, ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই মূসক হার যদি সম্প্রসারণমূলক অর্থাৎ নতুন নতুন করদাতা খুঁজে বের করার পরিবর্তে বর্তমানে যারা মূসক নিয়মিত দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে বর্ধিত হারে আদায় করে তাহলে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে। অনেক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই আশংকা বারবার উত্থাপিত হয়েছে যে, ভ্যাটের ব্যাপক আওতা বৃদ্ধি বিশেষভাবে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ম–সক হার দ্বারা ব্যবসায়ীরা হয়রানীর স্বীকার হবেন কারণ এখন ও রেয়াত, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, আইনের পরিপূর্ণ ধারণা এবং বর্তমানে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর উপর অধিক চাপ ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেক ব্যবসায়ীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এই প্রেক্ষিতে মূসকের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ যুক্তিযুক্ত যেটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে। ম–সক ও এসডি আইন ২০১২ এর কতিপয় ধারার সংশোধনের সুপারিশ করা হলঃ</p> <p>(১)    ৪৬(২) ধারায় রেয়াত আইনে শুধুমাত্র ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের কথা বলা হলে ও পণ্যের বিনিময়েও লেনদেন সংগঠিত হয় যা বিবেচনা করা যায়।</p> <p>(২)    ২(৪৮) ধারার কর অব্যাহতি পরিমান ৩০ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে মাসিক ৪ লক্ষ্য করে বাৎসরিক ৪৮ লাখ টাকায় এবং ২(৫৭) ধারার টার্নওভার করের সীমা ৮০ লক্ষ থেকে মাসিক ১৫ লক্ষ করে বাৎসরিক  ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ হবে। তবে যে এসআরও মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ব্যবসায়ীদের জন্য টার্ণওভার ট্যাক্স রহিত আছে সেটি বাতিল করতে হবে এবং মূল্য সংযোজনের পরিমান ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার সুপারিশ করছি যার ফলশ্রুতিতে টার্ণওভার কর ৩ শতাংশ থেকে কমে ২.২৫ শতাংশ দাঁড়াবে। উল্লেখিত সংশোধনের সুপারিশগুলো ক্ষুদ্র ও উদীয়মান ব্যবসায়ীর জন্য  ব্যবসা সম্প্রসারন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। </p> <p>(৩)    ধারা ৪৯ মতে উৎসে কর কর্তন এবং সরকারী কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য কর্তনকারী সত্ত্বা এবং সরবরাহকারী যৌথ ও পৃথকভাবে দায়ী- এখানে সরবরাহকারীকে দায়ী করার যুক্তি থাকে না। যেমন-আমানতকারীর সুদ থেকে ভ্যাট কর্তন করে ব্যাংকে জমা না করলে ক্ষুদ্র আমানতকারীর কিছুই করার থাকে না। </p> <p>(৪)     ধারা ৮৩(৩) মতে ম–সক কর্মকর্তা ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য করিবার ক্ষমতা একচেটিয়াভাবে প্রয়োগ করার বিধান রহিত করার সুপারিশ রইল কেননা এতে এই আইন বাস্তবায়ন ও সুফল এবং আইন বাস্তবায়নের সফলতায় বাধা সৃষ্টি করবে এবং করদাতাদের মাঝে ভীতি সঞ্চার সহ মূসক কর্মকর্তার এই ধারার অপপ্রয়োগ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। </p> <p>(৫)    ধারা ৯৯ মতে খেলাপী করদাতার স্থাবর সম্পত্তির উপর প–র্বস্বত্ত্ব ও এক মাসের মধ্যে উহার ক্রোক এ ধারাটি অত্যন্ত মারমুখী (aggressive) এবং জটিল যা অপপ্রয়োগ এবং স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানা জটিলতা দেখা দিবে। সুতরাং এটি সংশোধনের সুপারিশ করা হলো।</p> <p>(৬)    মূসক ও এসডি আইন ২০১২ এর আওতায় দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ পণ্যের উপর এসডি (সম্পূরক শুল্ক) ধার্য করা আছে এবং এই সব অধিকাংশ  পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক থাকবে কি থাকবে না এটি একটি বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আইন যদি স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা যথাযথ বিবেচনা না করে এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ বিসর্জন দিয়ে সম্পূরক শুল্ক তুলে নিলে দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে শিল্পে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে যার ফলে আমদানিকৃত পণ্য বাজারে প্রবেশে করবে। সুতরাং মূসক ও এসডি আইন ২০১২ অত্যন্ত সংবেদনশীল এই জন্য যে, এটি একদিকে মূসক বাস্তবায়ন করবে যা অবশ্যই ভোক্তাকে বহন করতে হবে এবং এসডি'র বা সম্পূরক শুল্কের অযাচিত অব্যাহতি শিল্পের জন্য হুমকি এবং একই সাথে দেশীয় শিল্প রক্ষায় সম্পূরক শিল্প বিনিয়োগকে বেগবান করবে। নতুন মূসক আইন ২০১২ এর কিছু ধারা এবং বিধিমালা ২০১৬ এর কতিপয় বিধি ছাড়া এটি একটি পরিপূর্ণ ভ্যাট আইন যার বাস্তবায়ন একটি শক্ত আইনি কাঠামো ছাড়াও বিবিধ অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা অপরিহার্য্য। যেমন-দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ, সফটওয়ার, প্রশিক্ষণ, সুষ্ঠু তদারকি এবং মনিটরিং ব্যবস্থা, বিক্রয়ের সঠিক হিসাব রক্ষণে আধুনিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি অন্যতম। বলা বাহুল্য যে, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দক্ষতা পরিলক্ষিত হয়নি বিধায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই আধুনিক মূসক আইনকে সহজে গ্রহন করতে পারছে না। ব্যবসায় সম্প্রদায় এই আইনকে যুগোপযোগী মনে করলে ও হয়রানির ভয়ে তটস্থ। এই ব্যাপারে অর্থ্যাত্ অহেতুক হয়রানি, অবিশ্বাস ও সন্দেহ ইত্যাদি দূরীকরণের এবং নিরসনের জন্য এনবিআর-কে এগিয়ে আসতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মানসিকতার অঙ্গীকারের মাধ্যমে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়িত সহজ হবে।</p>