<p>সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৬৬-৬৭</p> <p>৬৬. মানুষ বলে, আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব?</p> <p>৬৭. মানুষ কি স্মরণ করে না যে আমি তাকে আগে সৃষ্টি করেছি, যখন সে কিছুই ছিল না?</p> <p>তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তাই তাঁরই ইবাদত করা উচিত। এই ইবাদতের পরিপূর্ণ প্রতিফল পাওয়া যাবে পরকালে। তাই আলোচ্য দুই আয়াতে পরকাল বিষয়ে অবিশ্বাসীদের সংশয় ও সন্দেহের অবসান ঘটানো হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসীরা কিয়ামত ও পুনরুত্থান বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে, অথচ পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করা এবং তা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করার মতো কোনো যুক্তি নেই। ঘুরেফিরে তাদের একটি প্রশ্ন—‘মানুষ মরে পচে যাওয়ার পর কিভাবে আবার জীবিত হবে?’ তারা কী ভুলে গেছে যে এই মানুষই আগে মাটি ছিল, আল্লাহ তাআলা তাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?</p> <p>হাড়, মাংসও মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ একটি ব্যাপার। মানুষ যদি মরে লোহা কিংবা পাথরেও পরিণত হয়, তথাপি মহান আল্লাহ মানবদেহের ওপর জীবনের পোশাক পরাতে সক্ষম।</p> <p>মানুষের দুটি গন্তব্য রয়েছে—এক. ব্যক্তিগত পরিণতি, যাকে মৃত্যু বলা হয়। দুই. মানুষের সমষ্টিগত পরিণতি, যাকে কিয়ামত বলা হয়। মানুষ মরণশীল—এ নির্মম সত্যকে অদ্যাবধি কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। অমরত্বের সুধা পান করার অভিলাষ অনেকেই দেখিয়েছে, কেউ সফল হয়নি। কাজেই মৃত্যু মানুষের অনিবার্য নিয়তি ও পরিণতি। মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুকে যুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে গোটা বিশ্বের ব্যাপক মৃত্যু অর্থাৎ কিয়ামতকে সপ্রমাণ করা স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ একসময় এ পৃথিবীতে ছিল না। পর্যায়ক্রমে বংশপরম্পরায় তারা এ দুনিয়ায় আসে। কালক্রমে তারা নশ্বর এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এভাবে মৃত (রক্ত-মাটি) জীবিত হওয়া এবং জীবিত বস্তু মৃত হওয়ার বহু নজির মানুষের সামনে প্রতিনিয়তই হাজির হয়। বিশাল এ পৃথিবী পূর্ব দৃষ্টান্ত ছাড়া শূন্য থেকে অস্তিত্বে আনা যে স্রষ্টার কাজ; ধ্বংস হয়ে যাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া মৃত বস্তুকে আবার জীবিত করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়।</p> <p>গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ</p>