<p>মা-বাবার দেওয়া নামটি কণা হলেও ছোটবেলায় নানাবাড়ির সবাই তাঁকে বিন্দু নামে ডাকত। তবে মিডিয়ার যাত্রা শুরুর পর ‘কণা’ নামটি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। একই নামে আরেকজন শিল্পী থাকায় একজনের ফোন ভুল করে আরেকজনের কাছে চলে যেত! সমস্যা সমাধানের জন্য একদিন বাবা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এম এ মান্নানের সঙ্গে বসলেন কন্যা। অনেক ভেবেচিন্তে বাবার সমাধান, ‘আমরা তোমাকে কণা ডাকি, তোমার নানাবাড়ি সবাই ডাকে বিন্দু। দুটি শব্দকে এক করে আজ থেকে তুমি বিন্দু কণা নামটি ব্যবহার করো।’ সেদিনই বিন্দুর সঙ্গে যোগ হয়ে গেল কণা। এখন এ নামেই প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া, সাভারে বেড়ে ওঠা বরিশালের এই কন্যা। ২০১৪ সালে লোকগান নিয়ে আয়োজিত মাছরাঙা টেলিভিশনের রিয়ালিটি শো ‘বাউলিয়ানা’য় নাম লেখিয়ে দ্বিতীয় রানার্স আপ হন। সেই থেকে পরিচিতি পান মিডিয়ায়। তবে বিন্দু এখন আলোচিত স্টেজ শোর জন্য। বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো শোর অফার পাই। কখনো কখনো দিনে চার-পাঁচটি শোও আসে। সব তো করা সম্ভব হয় না। দেশের প্রায় আশি ভাগ জেলায় এরই মধ্যে গান করেছি।’ কিভাবে স্টেজের গায়িকা হয়ে উঠলেন? শোনা যাক তাঁর কাছেই, “২০১০ সালের কথা। ওয়ান্ডারল্যান্ডে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আব্বুর সঙ্গে দেখতে যাই। আব্বুর কয়েকজন বন্ধু জানত আমি গান শিখি। তারা আয়োজকদের বললেন আমাকে দিয়ে একটা গান গাওয়াতে। সুযোগ পেয়ে ‘দয়াল তোমারও লাগিয়া’ গানটি পরিবেশন করি। শোনার পর সবাই হাততালি দিল। অনেক প্রশংসা করল। আরো গান শোনানোর অনুরোধ করল। সেদিন থেকে আমার নামটিও চারদিকে ছড়াতে লাগল। একের পর এক শোর অফার পেতে শুরু করলাম।” স্টেজে গাওয়াটা কেমন এনজয় করেন, ‘এককথায় অসাধারণ! স্টেজই কিন্তু একজন শিল্পীর আসল পরীক্ষার জায়গা। এই মাধ্যমে গান করলে একজন শ্রোতার রি-অ্যাকশন সরাসরি জানা যায়। নিজেকে উজাড় করে দেওয়া যায়। একজন শিল্পীর জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে!’</p> <p>লোকগানের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ কী? বলেন, ‘লোকগানের পাশাপাশি ক্ল্যাসিকাল এবং অন্যান্য ধারার গানও শিখেছি। তবে স্টেজে গাইতে গাইতে লোকগানের প্রতি ভালোবাসাটা বেড়েছে। এখন মূলত লোকগানই করি। বলতে পারেন লোকগানই আমার মনের খোরাক মেটায়।’ স্টেজের পাশাপাশি টিভি লাইভেও মনোযোগী বিন্দু কণা। বিশেষ দিনগুলোতে বিভিন্ন চ্যানেলে চোখে পড়ে তাঁর পরিবেশনা। তবে ধীরে ধীরে অ্যালবামেও সময় দিচ্ছেন। অ্যালবামে বিন্দু কণার অভিষেক ২০১৫ সালে ইবরার টিপুর সংগীতায়োজনে প্রকাশিত মিক্সড ‘একতারার গান’-এ। যাতে শাহ আবদুল করিমের ‘বন্ধুরে কই পাব সখী গো’ গানটিতে কণ্ঠ দেন ওস্তাদ শফি মণ্ডলের সঙ্গে, আর একক কণ্ঠে গেয়েছেন ‘যে দুঃখ আমার অন্তরে’। এরপর পার্থ মজুমদারের সুর-সংগীতে ‘মন জানে’ শিরোনামের মিক্সডে দুটি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘কৃষ্ণ শূন্য বৃন্দাবন’ গানটির কথা লিখেছেন বিন্দু কণার বাবা। এর বাইরে সুমন কল্যাণ, আরফিন রুমি ও ব্যান্ড চিরকুটের সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তবে এখন পর্যন্ত মৌলিক গান মাত্র একটি। ‘তোমার ছাড়া’ শিরোনামের সে গানটির সহকণ্ঠ এবং সুর ও সংগীত আরফিন রুমির। বিন্দু কণা এখন নিজের প্রথম একক অ্যালবামের কাজ করছেন। ছয় গানের এ অ্যালবামের একটি গানের রেকর্ডিং শেষ। এটি বাজারে আসবে আসছে রোজার ঈদে। সুর ও সংগীতায়োজনে ইবরার টিপু। টিপুর সঙ্গে বিন্দু কণার সম্পর্কটাও দারুণ। ভালোবেসে কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছেন দুজন। এ অ্যালবাম ক্যারিয়ারটাকে আরেক ধাপ সামনে নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা এ গায়িকার, ‘আমাকে এবং আমার গান সম্পর্কে অনেক ভালো জানেন টিপু। কিভাবে কাজ করলে সফলতা আসবে সে মন্ত্রটাও তাঁর জানা। আর তাই তাঁর ওপরই নির্ভর করেছি প্রথম এককের জন্য।’ বিন্দু কণার গানে হাতেখড়ির গল্পটা অন্য রকম! তখন ক্লাস ফোরে পড়তেন। ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাসে খুব সুনাম বাঁধন ও তাঁর। বাঁধন গানও গাইতে পারতেন। আর তাই স্কুলে গানের কোনো অনুষ্ঠান হলে আলোচনা হতো বাঁধনকে নিয়ে। বিন্দু কণা তখন মুখ গোমরা করে থাকতেন, আর মনে মনে ভাবতেন, ‘ইস! আমিও যদি বাঁধনের মতো গাইতে পারতাম!’ একদিন বাসায় মায়ের কাছে গান শেখার বায়না ধরেন বিন্দু কণা। মা তাঁকে ‘কি গান শোনাব ওগো বন্ধু’ গানটি শিখিয়ে দেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর স্কুলে এক অনুষ্ঠানে গানটি গেয়ে নজর কাড়েন। অনুষ্ঠান দেখতে আসা বরিশালের উজিরপুরের তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ খান বিন্দু কণার গায়কির খুব প্রশংসা করেন। তিনি বিন্দু কণার বাবাকে অনুরোধ করেন মেয়েকে গান শেখাতে। বাজানো শেখার জন্য খুদে শিল্পীকে তিনি উপহার দেন হারমোনিয়াম, তবলা ও মন্দিরা। এমনকি আবুল কালম আজাদ নামে একজন গানের শিক্ষককে ঠিক করে দেন। যার কাছে বিন্দু কণার হাতেখড়ি।</p>