<p>গরমে ছেলেদের পোশাকের তালিকায় শার্ট সব সময়ই জনপ্রিয়। তবে গরমের শার্ট বলতেই শুধু সাদামাটা সুতি শার্ট নয়। দেশীয় ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে ফিউশন নকশা নিয়ে কাজ করছে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। এসেছে নানা বৈচিত্র্য। গরমের শার্টে রং, নকশা ও কাটে বিশেষ সংযোজন-বিয়োজন দেখা যাচ্ছে। গরমের জন্য ফুল শার্টকে হাতা গুটিয়ে হাফ শার্টে কনভার্ট করা হচ্ছে। আবার কখনো কলার ছাড়া ম্যান্ডোলিন গলার শার্ট শোভা পাচ্ছে। একরঙা শার্টের নিচের দিকে রঙিন ছাপার ফিউশন করা হচ্ছে।</p> <p>রঙের ক্ষেত্রে ডিজাইনার সাদা অফহোয়াইটের বাইরে নানা রং নিয়ে পরীক্ষা করছেন। হালকা আকাশি, পেস্ট, কলাপাতা সবুজের মতো রং শার্টের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।</p> <p>অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বললেন, ‘গরমে হাফ হাতা সুতি শার্টই বেশি পছন্দ। তবে খবু বেশি ফিটিং শার্ট পরা হয় না। একটু ঢিলে-ঢাালা শার্ট পরতেই ভাল লাগে। গরমে হালকা রঙের<img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/Feature/04 April/21-04-2018/1/a2z-23-04-2018-2.jpg" style="float:right; height:342px; margin:10px; width:354px" /> শার্টগুলোই বেশি পরা হয়।’</p> <p>ডাচ বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গরমে হালকা রঙের হাফ হাতার সুতি শার্টই পরতে বেশি পছন্দ করি। তবে কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে ফুলহাতা শার্ট পরতে হয় বেশি। সেক্ষেত্রে সাদা শার্টই প্রথম পছন্দ।</p> <p>আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র মোহাইমিনুল হক জয় বলেন, গরমে হালকা রঙের শার্টই পরি। তাতে গরম কম লাগে, আরামও বেশি। সুতি শার্ট পরতে চেষ্টা করি। কারণ সুতি কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা প্রাকৃতিক যে কোনো টেক্সটাইল ফাইবারের চেয়ে বেশি। যার ফলে ঘেমে গেলেও কাপড় দ্রুত তা শুষে নিতে পারে। শার্টের কাপড়ের ক্ষেত্রে ৩৫/৬৫ কাপড় পরার চেষ্টা করি। মানে যেটা ৩৫ শতাংশ পলিস্টার ও ৬৫ শতাংশ সুতি কাপড়। যা বাজারে বেশ জনপ্রিয়। রঙের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ সাদা, এর বাইরে হালকা রঙের কাপড়ও পরা হয়। ফ্যাশন হাউস ইয়েলোর ডেপুটি ম্যানেজার ও ডিজাইনার নাজমুল হাসান নাঈম জানালেন, গরমে ছেলেদের শার্টে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য দিতে ৮০ কাউন্টের সুতা থেকে তৈরি সুতি কাপড় ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এসব সুতা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। এরপর দেশেই বোনা হয় শার্ট। বিশেষ করে গরমের পোশাকের ক্ষেত্রে ইয়েলোর এই কাপড়ের বেশ নাম রয়েছে বাজারে। শার্টের ওপর ডিজিটাল প্রিন্টে কাজ করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রিন্ট কাপড়ের জমিনের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশে যায়, যা বেশ মোলায়েম হয়। কাপড়ের জমিনের সঙ্গে প্রিন্টে একদম মিশে থাকে। যার ফলে কোনো শক্তভাব থাকে না।</p> <p>প্রায় সব রঙেরই হালকা ও গাঢ় টোন রয়েছে। ইয়েলোর গ্রীষ্মের পোশাকে সব রঙের হালকা টোন নিয়ে কাজ করা হয়েছে।</p> <p> </p> <p>ইয়েলোর ক্যাজুয়াল শার্টের ক্ষেত্রে স্লিম ফিট নিয়েই বেশি কাজ করা হয়েছে। কারণ এটি বাজারে তরুণদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।</p> <p>এ ছাড়া রেগুলার কাটের মধ্যে ফুল স্লিভ ও হাফ স্লিভ রয়েছে। নিট কাপড়ের সঙ্গে ওভেনের ফিউশনও করা হয়েছে। যেমন—শার্টের কলারে সুতি ছাপা ও হাতায় গেঞ্জি কাপড়ের ব্যবহার।</p> <p>যাদের বাহু কিছুটা চওড়া তাদের কথা মাথায় রেখে হাতায় ইলাস্টিকের মতো রিপ দেওয়া রয়েছে. যাতে হাফ স্লিভের হাতা আপনার বাহুর মাপের সঙ্গে মানিয়ে যায়। বাহু চওড়া হলে যাতে বেশি আঁটসাঁট না লাগে।</p> <p>বাইরের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো গরমের সময় ছেলেদের শার্টে ম্যান্ডারিন কলার বেশ ব্যবহার করে।</p> <p>দেশীয় ডিজাইনাররাও গরমে ম্যান্ডারিন কলারের দিকে ঝুঁকছেন। বাড়তি কলার-কাফ ছাড়া এই শার্ট গরমে বেশ আরামদায়ক।</p> <p>কে ক্রাফটের ডিজাইনার শরিফুল হুদা বিপ্লব জানালেন, গরমের ছেলেদের জন্য মূলত ক্যাজুয়াল শার্টে সুতি কাপড় নিয়েই কাজ করছেন তারা। নরসিংদীর দেশি তাঁতের সুতি-ভয়েল কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/Feature/04 April/21-04-2018/1/a2z-23-04-2018-3.jpg" style="float:left; height:341px; margin:10px; width:380px" />শার্টের নকশার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে প্রিন্ট বেইজড টাই-ডাই, ব্লক প্রিন্ট ও হাতের কাজ। রঙের ক্ষেত্রে হালকা আকাশি, হলুদ, অফহোয়াইট, সাদা রং প্রাধান্য পেয়েছে। মোটিফের ক্ষেত্রে প্যাটার্ননির্ভর নকশা করা হয়েছে। তা ছাড়া শার্টের জমিনে মোটিফ নিয়ে কাজ বেশি করা হয়। প্রিন্টের ডিজাইনের ক্ষেত্রে কম্পোজিশনের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হয়।</p> <p>ছেলেদের শার্টের ক্ষেত্রে কিছুটা দেশীয় মোটিফ নিয়ে কাজ করে রঙ বাংলাদেশ। ডিজাইনার মো. ফয়সাল জানালেন, গ্রীষ্মে ছেলেদের শার্ট করা হয়েছে ভেজিটেবল ডাই, টাই অ্যান্ড ডাই, স্কিন প্রিন্ট ও ব্লক প্রিন্ট দিয়ে। শার্টের ক্ষেত্রে সাধারণ একটি প্যাটার্নের ব্যবহার করা হয়েছে। রঙ বাংলাদেশের আরেকটি বিভাগ হচ্ছে ওয়েস্ট রঙ। সেখানে শার্টের বিভিন্ন ফিউশন নিয়ে কাজ করা হয়। তরুণদের আকৃষ্ট করতে ফিটিং শার্টের ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া হাফ হাতা শার্টে বাহুর অংশে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। হাতা আড়াই ইঞ্চি বড় করা হয়েছে। সেটি ভাঁজ করে হাতার ওপরের দিকে বোতামের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা যাবে—এমন সুবিধা রাখা হয়েছে।</p> <p>ডিজাইনে ছেলেদের শার্টে পকেট খুব একটা গুরুত্ব পায়নি, তবে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। পাঞ্জাবি বা ফতুয়ার মতো পকেট বুকের কিছুটা নিচের দিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যাকে শার্ট কাম ফতুয়া বলা হচ্ছে।</p> <p>এবারের বৈশাখের পর থেকে নতুন বছরের থিম রাখা হয়েছে শীতল পাটি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাঁওতাল আলপনা নকশা। সেই জায়গা থেকে শীতল পাটির ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে ছেলেদের শার্টে। আকাশি হালকা হলুদ, নীল-সবুজের হালকা শেড ব্যবহার করা হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে গ্রীষ্মের পোশাকে যেন রংটা আলাদা করে বোঝা যায়। যেহেতু শার্টে ডাইয়ের কাজ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ধূসর ও আকাশি রং বেশ ভালো দেখায়। তাই এসব রং নিয়ে কাজ হয়েছে। গরমে চোখে যাতে আরাম লাগে, এমন রঙের ব্যবহার শার্টে বেশি করা হয়েছে। যেমন—পেস্ট, সবুজ ও কমলার হালকা শেড।</p>